ডিপ্রেশন

প্রথমেই আমরা আমাদের মেইলে পাওয়া একটা ঘটনা শেয়ার করি । ঘটনাটি হলোঃ


আসসালামু ওয়ালাইকুম। 

আমি মেয়ে,আমার বয়স ২৩বছর।

আমার কোনো সম্পর্ক নেই,কোনো বন্ধু-বান্ধব কেউই নেই।

সমস্যাটা হচ্ছে হঠাৎ হঠাৎ খুব অস্থির হয়ে পড়ি,কেনো হয়ে যাই নিজেও জানিনা।তখন নিজে নিজেই কান্না করা শুরু করি।দমবন্ধ লাগে তখন অনেক,নিজেকে সামলাতেই পারিনা।

আমার কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা,কোথাও যাইনা,বাসা থেকে বের হইনা,কারো সাথে মিশিনা।

ঠিকমতো পড়াশোনাও করিনা।পড়াশোনায় কন্সেন্ট্রেট করতে পারিনা সারাদিন একা থাকার পরেও।






ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? নিজেই নিজেকে কিভাবে সাহায্য করব?


সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে বিষণ্ণতা কী এবং এর লক্ষণসমূহ কী কী। তারপর বিষণ্ণতার চিকিৎসার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে। চিকিৎসাটা হতে পারে ব্যক্তিগত যত্নের মাধ্যমে বা সাইকিয়াট্রিক এর মাধ্যমে।

বিষণ্ণতা কী?

১৪ দিনের বেশি এবং দিনে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে প্রচন্ড মন খারাপ। এর সংজ্ঞা বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। তীব্র হতাশার অনুভূতি, ঘুমের অভাব, কোনো কাজ করতে অনীহা বিষণ্ণতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

বিষণ্ণতার লক্ষণঃ


ক্লান্ত লাগা বা অবসাদ বোধ করা।


কোনোকিছুতেই আগ্রহবোধ না থাকা।


বিক্ষিপ্ত বোধ করা অথবা মনোনিবেশ করতে সমস্যা হওয়া।


রাগের সমস্যা।


নিজেকে মূল্যহীন মনে করা।


ঘুমের সমস্যা।


আত্নহত্যার চিন্তা করা।


অতিরিক্ত অথবা কম ক্ষুধা।


ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি।


বারবার অতীত নিয়ে চিন্তা করা।


বিষণ্ণতার স্ট্রেসসমূহঃ


বাহ্যিক স্ট্রেস - যেকোনো দ্বন্ধ।


অভ্যন্তরীণ স্ট্রেস - পারেফকশনিজম, আবেগপ্রবণতা, সংবেদনশীলতা, রাগ ইত্যািদ।


মানসিক রোগ - জি এ ডি, ও সি ডি, বাইেপালার মুড ডিসঅর্ডার, ইটিং


বিষণ্ণতার চিকিৎসাঃ

যদি কোনো রোগী কোনো প্রকার স্ট্রেস না থাকা স্বত্ত্বেও বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে তবে তার ওষধ সেবন করা দরকার। জীবনে কোনো স্ট্রেস থাকলে সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিং কাযর্কর হয়।

বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের জীবনের দর্শন এমন হওয়া উচিতঃ


আমরা সবসময় সেই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করব যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অনিয়ন্ত্রিত জিনিস নিয়ে কখনো ভাববো না।


সবর্দা নিজের দিকে তাকাতে হবে। নিজের শক্তি এবং দুর্বলতাকে বুঝতে হবে। আমরা অন্যদের বিচার করব না। অন্যের সমালোচনা করারা পূর্বে নিজের সমালোচনা করব।


বিষণ্ণতা কমাতে করণীয়ঃ


আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় ৮ টি স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।


পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


আমাদের উচিত স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করা এবং সবসময় ইতিবাচক বিষয়গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করা।


আমরা সবর্দা আত্ন-সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করব।


যাইহোক না কেন, আমরা আমাদের ঘুমের সময় কোনো আপস করতে পারি না। আমরা একটা রুটিন অনুসরণ করার চেষ্টা করব।


আমাদের নিজের সাথে নিজে পজিটিভ কথা বলার চর্চা করতে হবে, ভিজ্যুয়ালাইজেশন করতে হবে।


একাডেমিক পড়ালেখার বাহিরে গল্পের বই, পত্রিকা পড়তে হবে এবং খেলাধুলা করতে হবে।


অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।


প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিতে হবে।


তাছাড়া আপনারা Overcoming Depression বইটা পড়তে পারেন। আমি এখন পড়ছি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বই(আমার মতে)।




বিষণ্ণতা থেকে বাঁচার উপায় কী?


আমি দীর্ঘ চার বছর বিষণ্ণতায় ভুগেছি। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল আমি সকালে ঘুম থেকে উঠতে ভয় পেতাম আরেকটা অসহনীয় দিন শুরু হবে বলে। প্রচুর পড়াশোনা করা উদ্যমী একটা মেয়ে ছিলাম আমি। পড়াশোনা থেকে চলে গেলাম অনেক দূরে। মানসিক অবসাদ আমাকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ করে তুলছিল দিনকে দিন। মনে হতো মনে কোন শক্তি নেই, আমার হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেছি বের হয়ে আসতে,পারি নি। শেষমেশ সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওসব পরামর্শ কাজে লাগবে না বলে মনে হতো আমার।যাইহোক মাস পাঁচেক থেকে আমি মোটামুটি ভালো আছি। আমার মতে বিষণ্ণতা দূরীকরণে যে কাজগুলো করা উচিত-

১. আপনি কেন বিষণ্ণতায় ভুগছেন সেই কারণটি খুঁজে বের করুন। ভালবাসাহীনতা ? আপনি ভালবাসা খুঁজুন এমন মানুষের কাছে যে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে না। আপনার মা হতে পারে,বন্ধু হতে পারে,নতুন কেউ আপনাকে ভালবাসতে পারে, আপনি বিয়ে করতে পারেন ইত্যাদি। তবে পরিবার হতাশার সবচেয়ে বড় উপশমকারী বলে আমি মনে করি।আর মা-যেমনই হোক, তঁার চেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু কেউ নেই। চাকরি হচ্ছে না,পড়ায় মন দিতে পারছেন না সব ক্ষেত্রেই কঁাটা দিয়ে কাঁটা তোলা সলুশন। যে কারণে বিষণ্ণ আপনি যদি সম্ভব হয় তা দূর করার চেষ্টা করুন নাহয় সুন্দর বিকল্প খুঁজে বের করুন।

২. আপনার কষ্ট শেয়ার করুন, শেয়ার করুন এবং শেয়ার করুন। আপনাকে অবশ্যই কাউকে না কাউকে বলতে হবে। চেপে যাওয়া মানে নিজেকে ধ্বংস করা। আমার মনে পড়ে প্রথম দিকে আমি যখন প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলাম,আমি আমার এক বন্ধুর সাথে কেমন পাগলের মতো বকেছি দিনের পর দিন। মাসখানেক পরে নিজেই অনুভব করেছি কষ্টের তীব্রতা কমে যাচ্ছে।

৩. ধর্ম - ধর্মীয় প্রার্থনা এমন শান্তি এনে দিতে পারে যা পৃথিবীর সবচেয়ে আপন মানুষটির পক্ষেও সম্ভব নয়। এই রমজানে আমি যখন কুরানের অর্থ পড়া শুরু করলাম কী যে অদ্ভুত প্রশান্তি পেয়েছি তা বোঝাতে পারবো না। সুতরাং সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখুন। আপনার কল্যাণ অকল্যাণ সব অবস্থায় তিনি আছেন।

৪. সুইসাইড এর চিন্তা করবেন না। এটা হাস্যকর এবং ভয়ানক। আপনি চলে গেলে গুটিকয় আপন মানুষ ছাড়া পৃথিবীর কারো কিছু আসবে যাবে না।শেষ পর্যন্ত দেখে যান তাই।

৫. ভালবাসতে শিখুন। মানুষ,প্রাণি,গাছপালা সবকিছুকে। ভালবাসা আপনাকে পবিত্র হতে শিখাবে। আপনি যেমন অন্যের কাছে ভালবাসা চান,আপনার কাছেও তাদের ভালবাসা প্রাপ্য আছে। এসব আপনাকে জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক হতে সাহায্য করবে।

৬. যা করতে ভালো লাগে কিছুদিন তাই করুন।

৭. একটা সিরিয়াস ব্যাপার হচ্ছে- যারা আপনার কথা শুনতে চায় না দয়া করে তাদের এভয়েড করে যান। তাদের উপেক্ষা আপনাকে আরো বিষণ্ণ করে তুলবে। মনে রাখবেন পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ মানুষটিকেও কেউ না কেউ ভালবাসে। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষটিকে খুঁজে বের করা।

৮. অতিমাত্রায় বিষণ্নতা অনেক সময় ভয়ানকভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

৯. ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাময়িক ভাবে আপনাকে সব ভুলিয়ে রাখলেও বাস্তব জগত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন।



No comments

Powered by Blogger.